বিয়ে করছেন? প্রস্তুতি কি শেষ পর্যায়ে? কেনাকাটা আর আয়োজনের ফর্দ তৈরি করছেন? মেহমানদের তালিকা তৈরি করছেন? কোন কিছু বাদ পড়ল কিনা শেষ মুহূর্তে মিলিয়ে নিচ্ছেন? অনেক ব্যস্ততা, অনেক কাজ। এত ব্যস্ততার মাঝে একটা বিষয় ভুলে যাচ্ছেন না তো? জীবনসঙ্গীর সাথে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন? গুরুত্বপূর্ণ কিছু মেডিকেল টেস্ট বাকি রয়ে গেল না তো?
বিয়ের আগে হবু স্বামী-স্ত্রীর চারটি মেডিকেল পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন ভারতের নীলরতন সরকার মেডিকাল কলেজের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অরুণিমা হালদার।
১. থ্যালাসেমিয়া
যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন সন্তানের এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি আক্রান্ত হন তাহলেও এই সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ। তবে হবু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একজন যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তাতে খুব বেশি সমস্যা হয় না। তবে দুজনেই যদি বাহক হন সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সন্তান না নেয়ার পরামর্শ দেন।
কোনো মা ও বাবার রক্তে যদি থ্যালাসেমিয়ার জিন থাকে এবং সেখান থেকে বংশপরম্পরায় যদি তা সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত হয়, তখন ওই জিনের কারণে সন্তানের রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থ্যালাসেমিয়া হতে পারে; যেহেতু বাবার একটা জিন এবং মায়ের একটা জিন মিলেই শিশুর জন্ম হয়। তবে মা ও বাবার যেকোনো একজন থেকে একটি ডিফেক্টিভ জিন শিশুর মধ্যে সঞ্চারিত হলে তেমন সমস্যা হয় না। তখন আরেকটি যে সক্রিয় জিন আছে তার মাধ্যমে যতটুকু হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে, সেটা দিয়ে মোটামুটি সে চলতে পারে। যদিও শেষ বয়সে গিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. বন্ধ্যত্ব এবং ইনফার্টিলিটি সংক্রান্ত পরীক্ষা:
সন্তানের প্রত্যাশা সব মানুষেরই থাকে। তবে অনেকেরই বাবা-মা হওয়ার সৌভাগ্য হয় না। তাই বিয়ের আগে পাত্রীর স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে ইউটেরাস ও ওভারিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। একইসঙ্গে পাত্রের বীর্যপাতজনিত কোনো সমস্যা আছে কিনা তাও আগেই টেস্ট করে জেনে নেওয়া উচিত।
৩. যৌনরোগ বা এসটিডি পরীক্ষা:
বিয়ের আগে একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকলে কিংবা নানা কারণে এইচআইভি, গনোরিয়া, সিফিলিসের মতো যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রোগগুলি সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (এসটিডি)। আর তাই বিয়ে করার আগে পাত্র-পাত্রীর এই পরীক্ষাগুলো করে নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
৪. নারীদের আলট্রাসোনোগ্রাফি:
ইদানীং নারীদের মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। এটির কারণে বিয়ের পর গর্ভধারণ সমস্যা দেখা দেয়। যত তাড়াতাড়ি পলিসিস্টিক ধরা পড়বে তত দ্রুত এর চিকিৎসা করা উচিৎ।
সল্টলেক আমরি এবং নারায়ন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ পূষণ কুণ্ডু আবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন, বিয়ের পর স্বামী অথবা স্ত্রীর কারো মধ্যে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তার চিকিৎসা নেই, বিষয়টি এমন নয়। তবে থ্যালাসেমিয়া, রক্ত পরীক্ষা করে রাখা ভালো; এতে ভবিষ্যতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুবিধে হয়। আর সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজের ক্ষেত্রেও বিয়ের আগে পরীক্ষা করা যেতেই পারে। সঙ্গী এইচআইভি পজিটিভ কিনা, তা জানার অধিকার হবু স্বামী-স্ত্রীর আছে। এসব পরীক্ষায় সমস্যা ধরা পড়লে পিছিয়ে আসতে হবে এমন পরামর্শ চিকিৎসকরা দেন না। বরং আগেভাগে চিকিৎসার মাধ্যমে জটিলতাহীন একটি দাম্পত্যের পথ বাতলে দেন।