রাত ২:১৬ শুক্রবার ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ৩রা জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

হোম দেশ ছিঁচকে চোর থেকে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা দেলোয়ার!

ছিঁচকে চোর থেকে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা দেলোয়ার!

লিখেছেন sayeed
Spread the love

সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে মারধরের ভিডিও ভাইরালের ঘটনার অন্যতম হোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। এক সময়কার ছিঁচকে চোর দেলোয়ার এখন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা। তার বাহিনীতে ৫০ থেকে ৬০ জন ক্যাডার রয়েছে। মূলত একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ নেতাদের নজরে আসে দেলোয়ার।

স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ছ্যাঁচড়া চোর থেকে দেলোয়ার কিশোর গ্যাং ‘মামা বাহিনী’ গড়ে তোলে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নে তার বাহিনী বিস্তৃত। এ বাহিনীতে ক্যাডার সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ জন। হত্যা, রাহাজানি, চাঁদাবাজিসহ পাঁচ মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন।

দেল্যা চোরা পুলিশের খাতায় দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। বাহিনীর ক্যাডাররা চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই, নারী নির্যাতন ও ইভটিজিংয়ের সঙ্গে জড়িত। অনেকের প্রয়োজনে থানার গোলঘরে সালিশদার হিসেবেও গেছে দেলোয়ার। বেগমগঞ্জ থানার দু-একজন সাব-ইন্সপেক্টর ও সহকারী সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গেও তার সখ্য ছিল। অথচ পুলিশ বলছে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আর এলাকাবাসী বলছেন দেলোয়ার গ্রামেই ছিল। দেলোয়ারের দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। চুরি-ছিনতাই, অস্ত্রবাজি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সে অর্থ আদায় করত। একে মেরে, ওকে হুমকি দিয়ে ও চাঁদাবাজি করে তার দিন কাটত। অস্ত্র বিক্রি ও অস্ত্র ভাড়া দিয়ে সে অর্থ কামাই করত।

এ প্রসঙ্গে এলাকাবাসী জানান, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবিরের পক্ষে একটি ভোটকেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ নেতাদের নজরে আসে দেলোয়ার। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোটে হেরে যান। এর পর দেলোয়ার এলাকার যুবলীগ নেতায় পরিচিত হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরণের পক্ষে নির্বাচন করে। নির্বাচনের পর বিশাল মোটরসাইকেল মিছিল করে কিরণকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে দেলোয়ার আওয়ামী লীগের নেতা বনে যায়। এমপি কিরণকে ফুলের তোড়া দেয়া ছবি দিয়ে দেলোয়ার পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, এমনকি উপজেলা ও জেলা সদরেও টাঙিয়ে দেয়।

জানা গেছে, বেগমগঞ্জ উপজেলার ছায়েদুল হকের তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় দেলোয়ার। রোববার র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে দেলোয়ার। বেগমগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ চাঁদাবাজি, রাহাজানি, বিস্ফোরক আইনে চারটি মামলা রয়েছে। নতুন করে তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে একটি, বেগমগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (ধর্ষণ) একটি মামলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, দেলোয়ার ছোটবেলায় বাড়ি বাড়ি চুরি করত। পুকুরের মাছ চুরি করত। ৭-৮ বছর আগে সিএনজি চালাতে শুরু করলেও দেলোয়ারের সঙ্গে বেগমগঞ্জের সুমন বাহিনী ও ফাজিলপুরের নিজাম বাহিনীর সখ্য হয়। এর পর সিএনজি চালানো ছেড়ে দিয়ে দেলোয়ার কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে বিক্রি শুরু করে। এর সঙ্গে সে অস্ত্র বেচাকেনা ও অস্ত্র ভাড়া দেয়াও শুরু করে।

এ বিষয়ে একলাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, দেলোয়ার বা তার বাহিনীর কেউ আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তবে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার প্রশ্রয়ে তারা অস্ত্রবাজি করে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলন করে বেগমগঞ্জ আসনের এমপি মামুনুর রসিদ কিরণ জানান, দেলোয়ারকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না। নির্বাচনে জয়লাভের পর অনেকেই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। এর মধ্যে কোন ফাঁকে তাকে ফুল দিয়েছিল তা তার জানা নেই।

You may also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More