সকাল ১০:০২ শুক্রবার ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ৩রা জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

হোম দেশ রিফাত হত্যাকাণ্ড: শুরু থেকে শেষ

রিফাত হত্যাকাণ্ড: শুরু থেকে শেষ

লিখেছেন Fahmid Souror
Spread the love

বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত হত্যা মামলায় ফাঁসির শাস্তি পেয়েছেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। এই ঘটনায় ফাঁসির দণ্ড পেয়েছেন আরো পাঁচজন। আসুন জেনে নেই চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার শুরু থেকে রায় পর্যন্ত ঘটনার সবকিছু।

বাল্যকাল থেকে বরগুনা জিলা স্কুলে একত্রে লেখাপড়া করতো রিফাত ও নয়ন বন্ড। তাদের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। ২০১৭ সাল থেকে মন দেওয়া নেওয়া শুরু হয় মিন্নি ও রিফাতের। ২০১৮ সালের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন রিফাত। এই সময় দেড় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এ সুযোগে নয়ন বন্ড মিন্নির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেম নিবেদন করে এবং মিন্নিও তাতে সাড়া দেয়। একপর্যায়ে মিন্নি রিফাত শরীফ ও নয়ন বন্ড দু’জনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন।

২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ে হয়। বিয়েতে নয়ন বন্ডের পক্ষে সাক্ষী ছিল মামলার ২ নম্বর আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী এবং মিন্নির পক্ষে সাক্ষী হিসেবে ছিলেন নয়ন বন্ডের প্রতিবেশী ও বন্ধু সাইফুল ইসলাম মুন্না এবং তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।

বিয়ের পর মিন্নি জানতে পারেন নয়ন বন্ড মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এবং থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাই নয়ন বন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রিফাতের সাথে আবার পেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন মিন্নি। কিছুদিন পর পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।

বিয়ের পর মিন্নির পূ্র্বের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পারেন রিফাত। এনিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় তাদের। এক পর্যায়ে মিন্নির গায়ে হাত তোলেন রিফাত। এই ঘটনার পর রিফাতকে মায়েস্তা করতে নয়ন বন্ডের গ্যাংয়ের শরনাপন্ন হন মিন্নি। পরদিন রিফাত ফরাজী ক্যালিক্স একাডেমির সামনে থেকে পূর্বদিকে দৌড়ে গিয়ে দু’টি রামদা নিয়ে এসে একটি মাটিতে রাখে অন্যটি দিয়ে রিফাতকে কোপানো শুরু করে। কিছুক্ষণ পর নয়ন রিফাত ফরাজীর হাতের রামদাটি নিয়ে রিফাতকে কোপাতে থাকে।

ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি এ সময় প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন রিফাতকে বাঁচানোর। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে রিফাতকে বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতালে ও পরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন বিকালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন রিফাত। হামলার দিন সন্ধ্যায় এক কিশোরকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে পুলিশ এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার শুরু করে।

২০১৯ সালের ২ জুলাই ভোরে বরগুনার বুড়িরচর গ্রামে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। এরপর ঘটনায় আসে মোড়। রিফাতের পরিবার দাবি করে রিফাত হত্যার পেছনে মূল প্ররোচনাকারী হলেন স্ত্রী মিন্নি। এই ঘটনা অস্বীকার করেন মিন্নি। রিফাত হত্যাকে ভিন্ন পথে নেওয়ার জন্যই তাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

২০১৯ সালের ১৬ জুলাই রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। ১ সেপ্টেম্বর বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করেন পুলিশ।

২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, ডাক্তার ও সিআইডি কর্মকর্তাসহ ৭৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। উভয় পক্ষের যুক্তি তর্ক চলে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেদিনই এই মামলার রায়ের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

You may also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More