সকাল ১০:১১ শুক্রবার ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ৩রা জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

হোম দেশ ইউএনওর আলমারিতে লাখ লাখ টাকা জেনেই বাসায় ঢোকে রবিউল

ইউএনওর আলমারিতে লাখ লাখ টাকা জেনেই বাসায় ঢোকে রবিউল

লিখেছেন মামুন শেখ
ইউএনওর আলমারিতে লাখ লাখ টাকার কথা জেনেই ঢুকেছিলো রবিউল
Spread the love

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের বাসার আলমারিতে লাখ লাখ টাকা থাকার কথা জেনেই চুরি করতে ঢোকেন মালী রবিউল ইসলাম। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউএনও ও তার বাবার ওপর হামলা করেন তিনি। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে দৈনিক যুগান্তরের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুয়ায় আসক্ত রবিউল। জুয়ার নেশায় কয়েক মাস আগে ইউএনওর বাসা থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরি করেন তিনি। এ টাকা ফেরত পাওয়ার পর ইউএনও ওয়াহিদা খানম তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘৬০ হাজার টাকা না দিলে তোমার নামে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে অভিযোগ দেয়া হবে। তখন তোমার চাকরি থাকবে না।’

চাকরি রক্ষার জন্য ধার-দেনা করে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেন রবিউল। তবে তার আগেই ওয়াহিদা ডিসি অফিসে রবিউলের নামে অভিযোগ দেন। অভিযোগের তদন্ত শেষে ডিসি অফিস থেকে রবিউলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর রবিউলের বেতন বেসিকের অর্ধেক হয়ে যায়। পাওনাদারদের চাপ ও জুয়া খেলতে না পারায় রবিউল মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ভুগছিলেন। এ অবস্থায় ইউএনওর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করেন।

রবিউলকে চিনে ফেলেন ইউএনও ওয়াহিদা

২ সেপ্টেম্বর রাতে ওয়াহিদা খানমের রুমে ঢুকে তিনি ওয়্যারড্রবের ওপর থাকা ভ্যানেটিব্যাগ থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করেন। এ সময় ইউএনওর তিন বছর বয়সী সন্তান কান্নাকাটি শুরু করলে ইউএনও জেগে যান। রবিউলকে তিনি চিনে ফেলেন। তখন ইউএনওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন রবিউল। এতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

এরপর ওয়াহিদার বাবা ওমর আলী শেখের কাছে গিয়ে আলমারির চাবি চান রবিউল। চাবি দিতে রাজি না হলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করেন।

একপর্যায়ে ইউএনওর শিশুসন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিলে ওমর আলী তাকে চাবির গোছা দেন। অনেকগুলো চাবি থাকায়, তার মধ্যে কোনটা আলমারির চাবি তা বুঝতে পারছিলেন না রবিউল। অনেক চেষ্টা করেও আলমারি খুলতে না পেরে একপর্যায়ে চাবির রিং নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। তাকে গ্রেফতারের পর তার দেখানো তথ্যমতে চাবির গোছা উদ্ধার করা হয়।

সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ১৬১ ধারায় রবিউল পুলিশের কাছে সব খুলে বলেছে। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে রবিউল প্রথম দফায় ইউএনওর বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে দ্বিতীয়বার চেষ্টায় সফল হন। ইউএনওর প্রতি ক্ষোভ এবং টাকা চুরি করতেই রবিউল এ হামলা করেছেন।

বৃহস্পতিবার জবানবন্দি রেকর্ড করাতে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জবানবন্দি রেকর্ড না করে ফের রিমান্ডে নেয়া হয়। তবে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের পর রবিউল আদালতে জবানবন্দি দেবেন বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

আলমারিতে ছিল ৪০ লাখ টাকা, পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার

রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহানুর রহমান, ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম ও মামলার বাদী ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্টরা ইউএনওর বাসার আলমারি খুলে ৪০ লাখ টাকা, পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার, স্বর্ণালংকার, ব্যাংকের চেক, জমির রসিদ ও দলিলপত্র পান।

এগুলো জব্দ না দেখিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মামলার বাদী শেখ ফরিদ উদ্দিনের হাতে তুলে দেয়া হয়। আলমারিতে এক হাজার টাকার ৪০টি বান্ডিল পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় র‌্যাব তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল। আমরা দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। এই পাঁচজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত রবিউলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাকি চারজনের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই আমরা রবিউলের জবানবন্দি নেয়ার চেষ্টা করছি।

তিনি জানান, আলমারিতে কী ছিল না-ছিল, তা আমাদের তদন্তের বিষয় না। তাই আলমারিতে পাওয়া কোনো জিনিস জব্দ করা হয়নি। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে যেসব আলামত জব্দ করা দরকার, সেগুলো জব্দ করেছি।

সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ওয়াহিদা খানম ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হলেও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থাকা কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের (সহকারী কমিশনার, ভূমি পদমর্যাদার) মধ্য থেকে একাধিকবার ঘোড়াঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও ইউএনও তা ঠেকিয়ে দেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। সকালে তাকে ও তার বাবাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলাম, রংমিস্ত্রি নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সান্টু কুমার দাস, নৈশপ্রহরী নাজিম হোসেন পলাশ ও মালী রবিউল ইসলাম।

এদের মধ্যে আসাদুল, নজরুল ও সান্টুকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর রবিউলকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ছয় দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার আবার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

আরো পড়ুন: এনামুল যাই করেন তাই ভাইরাল!

You may also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More