গত বছরের মতো এবারও হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। পূর্ব ঘোষণা না দিয়েই ভারতের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে গত বছরের অভিজ্ঞতায় এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে আগে থেকেই সতর্ক ছিল। এরিমধ্যে মিয়ানমার এবং তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি চূড়ান্ত করেছে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাবার কারণ দেখিয়ে রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়ায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
তবে ভারতের ব্যবসায়ীরা অন্য কথা বলছেন। তারা বলছেন, টনপ্রতি ২৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ ডালার নির্ধারণ করা হলেই আবারো রপ্তানি শুরু হবে।
দৈনিক কালের কণ্ঠ অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম তাদের বলেছেন, ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ ২৫০ ডলার মূল্যে আমদানি হয়ে আসছে। ভারতের নাসিকে বন্যার কারণে সেখানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিকারকরা ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করবেন না। এ কারণে তারা এখন রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় সোমবার খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ রুপি (৬৪ টাকা) দরে।
ভারতের পেট্রাপোল রপ্তানিকারক সমিতির পক্ষে ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষের কথাও প্রায় একই রকম। তিনি বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানিকারক সমিতি টন প্রতি ৭৫০ ডলারের নিচে পেঁয়াজ রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে পেঁয়াজ বোঝাই অনেক ট্রাক বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করেছে, নাকি ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেবে সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
তবে দেশে পর্যাপ্ত মজুদ আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারতের বিকল্প হিসেবে তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ সরবরাহ লাইনে আছে।
মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ চলতি মাসের শেষ নাগাদ দেশের বাজারে ঢুকবে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশে পেঁয়াজের মজুদ পর্যাপ্ত থাকলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এ ব্যাপারে আমরা এবার সতর্ক রয়েছি।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রফিক ট্রেডার্সের রফিকুল ইসলাম বলেন, ভারতের বেঙ্গালুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে নতুন পেঁয়াজের আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তুরস্ক, মিয়ানমার, মিসরসহ পেঁয়াজ রপ্তানিকারী দেশগুলো থেকে আমদানির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে গড়পড়তা ২০ থেকে ২৫ দিনের মতো সময় লাগে। তাই মন্ত্রণালয়ের দ্রুত উদ্যোগ প্রয়োজন।