বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিরূপ মন্তব্যের জেরে মুসলিম দেশগুলোতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। চলমান এ বিক্ষোভের মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন মহানবী হযরত মোহাম্মদ( সা.) এর কার্টুন প্রদর্শন করায় আঘাতপ্রাপ্ত মুসলমানদের অনুভূতি তিনি বুঝতে পেরেছেন।
তবে ম্যাক্রোঁ যোগ করেছেন ‘উগ্র ইসলামের’ বিরুদ্ধে তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন কারণ এরা বিশ্বের সব মানুষের জন্য হুমকি। বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য। স্থানীয় সময় শনিবার (৩১ অক্টোবর) আল জাজিরায় প্রকাশিত একান্ত সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ এসব কথা বলেন।
গত ১৬ অক্টোবর প্যারিসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিতর্কিত কার্টুন শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনের কারণে ক্ষুব্ধ ওই কিশোর স্কুল শিক্ষককে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করেন ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর। পরে ফ্রান্সের সরকার ওই স্কুল শিক্ষককে দেশটির সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদকে ভূষিত এবং বিভিন্ন ভবনের গায়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিতর্কিত সেই কার্টুনের প্রদর্শন শুরু করে।
মুসলিম বিশ্ব মনে করে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই কার্টুনের প্রদর্শনের ব্যবস্থার নির্দেশ দেন।
এ প্রসঙ্গে আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, মহানবী (সা.) এর কার্টুন প্রকাশের পর তারা (মুসলমানরা) যে আঘাত পেয়েছে, আমি তাদের অনুভূতি বুঝতে পেরেছি। আমি তাদের শ্রদ্ধা করি। তবে আপনাদের আমার ভূমিকা বুঝতে হবে। কারণ এখন আমি দুইটি কাজ করছি- এক শান্তি বজায় রাখা এবং মানুষের অধিকার রক্ষা করা।
ম্যাক্রোঁ বলেন , আমি সবসময় আমার দেশে কথা বলার, লেখার, চিন্তাভাবনার স্বাধীনতা রক্ষা করব। আমারর দেশে কিছু রাজনৈতিক নেতা তার বক্তব্যকে বিকৃত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ কারণে মানুষ বিশ্বাস করছেন যে, ব্যঙ্গচিত্রগুলি ফরাসি রাষ্ট্রের পৃষ্টপোষকতায় প্রর্দশন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমার বক্তব্যকে মিথ্যা এবং বিকৃতি করা হয়েছে। যা ফলে মানুষ মনে করছে আমি এই কার্টুনগুলিকে সমর্থন করেছি।কার্টুনগুলো কোন সরকারি প্রকল্প নয়, তবে এটি মুক্ত এবং স্বতন্ত্র সংবাদপত্র থেকে প্রকাশিত হয়েছে; যা সরকারের সাথে অনুমোদিত নয়।
২০১৫ সালে ফরাসি পত্রিকা শার্লি এবদোও ম্যাগাজিনে মহানবী (সা.) এর কার্টুন প্রকাশ হওয়ায় সেই সময় শার্লি এবদোর অফিসে হামলা হয়েছিল। সম্প্রতি অবমাননাকর কার্টুনগুলো পুনর্মুদ্রণ করেছে ম্যাগাজিনটি।
মুসলমানদের কাছে মহানবী (সা.) শ্রদ্ধাশীল আদর্শ এবং ইসলামেও যেকোন ধরণের দৃশ্য-চিত্রকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে ফ্রান্স সরকার ইসলামকে যেভাবে সন্ত্রাসবাদ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে তা মুসলমানদের জন্য অবমাননাকর।
ম্যাক্রোঁ বলেন, আজ বিশ্বে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা ইসলামকে বিকৃতি করছে। ধর্মের নামে, তারা ইসলাম রক্ষার নামে- হত্যা করে, জবাই করে। আজকে ইসলামের নামে কিছু চরমপন্থী আন্দোলন এবং ব্যক্তি সহিংসতা পরিচালনা করছে। অবশ্যই এটি ইসলামের জন্য সমস্যা, এ কারণে মুসলমানরা প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত ১৬ অক্টোবর মহানবী (সা.) এর কার্টুন নিয়ে ক্লাসে পড়ানো এক শিক্ষকের শিরশ্ছেদের ঘটনার পর ম্যাক্রোঁ ইসলাম নিয়ে তার মনোভাব পুর্নব্যক্ত করেন। ওই সময় ফ্রান্সের সরকারি ভবনেও মহানবী (সা.) এর অবমাননাকর কার্টুনগুলো দেখা যায়।
ইসলাম নিয়ে মন্তব্য, কার্টুনকে কেন্দ্র করে ফরাসি সরকার এবং মুসলিম বিশ্বের মধ্যকার তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ইসলাম নিয়ে ফ্রান্স সরকারের যে মনোভাব তাকে মুসলিমরা নিন্দনীয় বলে মনে করছে। অনেক দেশ ফরাসি পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।