আইনজীবী হতে চেয়েছিলেন আনতারা। সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল তাঁর। আজ শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনে ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। জেলার সংস্কৃতি অঙনের প্রিয়মুখ আনতারা মোকারমা অনিকাকে (১৯) হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে সহশিল্পীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার সকালে মায়ের সঙ্গে অসুস্থ নানাকে দেখতে ঢাকা যাওয়া কথা ছিল তাঁর। কাটা ছিল ট্রেনের টিকেটও। সকাল সাড়ে ছয়টায় মা-মেয়ে যখন স্টেশনে পৌঁছলেন ঠিক তখনই আন্তঃনগর এগারসিন্দুর ট্রেনটি চলতে শুরু করে। দৌঁড়ে সেই ট্রেনে উঠতে চেয়েছিলেন তাঁরা। মা আসমা বেগম উঠে গেলেও উঠতে পারেনি আনতারা। পা পিছলে চলে যান ট্রেনের চাকার নিচে। তাকে দিখণ্ডিত করে চলতে থাকে ট্রেন। মেয়েকে বাঁচাতে মা-ও ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েন মা। কিন্তু এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে সব। মেয়ের নিথর আলগা দেহ দেখে কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনে সংজ্ঞা হারান তিনি।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজে থেকে এ বছর বাণিজ্য বিভাগে থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল আনতারার। তাঁর বাবা মোকাম্মেল হক একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আনতারা ছিলেন বড়। তারা শহরের খরমপট্টিতে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
দুপুরে শহরের খরমপট্টি এলাকায় আনতারাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মা আসমা বেগম পাগলের মতো বিলাপ করছেন। এ নারীর বুক ফাটা কান্নায় প্রতিবেশিরা চোখের জল ফেলছে। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলছেন তারা।
আনতারার বাবা মোকাম্মেল হক যেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন। মেয়ের কফিনের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে বিড় বিড় করে কী যেন বলছেন। এ সময় তার কাছে গেলে, তিনি বলেন, আইনজীবী হতে চেয়েছিল সে। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম। সংস্কৃতি কর্মকাণ্ডে তার মায়ের পাশাপাশি আমিও উৎসাহ দিতাম। মেয়েকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তা আর হলো না।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান বিশ্বাস জানান, নিহতের বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।