সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত আসামি রবিউল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে ৯টায় ইনাতগঞ্জ থেকে রবিউলকে আটক করা হয়। এর আগে রবিউল হাসানের মা ও বোনকে র্যাব-পুলিশ ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়।
রবিউল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বড়নগদিপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, রবিউলের বাবা দেলোয়ার হোসেন স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত নয়। রবিউলও স্থানীয় কোন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কখনোই কাজ করেননি। কিন্তু সিলেটে তিনি ছাত্রলীগের হয়ে অস্ত্রবাজি করতেন। গ্রাম্য কোন্দলেও তিনি তার আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ হয়ে প্রায়ই অস্ত্রের মহড়া দিতেন। রোববার বিকালেও তিনি বাড়ির পাশের আখিল শাহ্ বাজারের কাছে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। ওখান থেকে সন্ধ্যায় কুশিয়ারা নদী পাড় হয়ে ঢাকায় পালানোর সময় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের ইনাতগঞ্জ এলাকা থেকে রাত ৯ টায় আটক হন তিনি।
পরে রাত সাড়ে ৯ টায় রবিউল ইসলামকে গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী।
এমসি কলেজে অধ্যায়নরত দিরাইয়ের এক ছাত্র জানায়, আদাব-সালাম না দিলে শিক্ষার্থীদের মারধর করে আহত করতেন রবিউল। শুধু তাই নয়, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা পেলেই নারী শিক্ষার্থীদের ওড়না ধরে টান মারা, মদ-জুয়া, ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, বিনা কারণে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা, হোস্টেলে জোরপূর্বক বসবাস, মিল না দিয়ে বন্ধুবান্ধবসহ খাওয়া, হোস্টেলের সিট বিক্রিসহ নানা ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
তিনি আরো জানান, রবিউল ও তার সহযোগিরা টিলাগড়সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা আদায়, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই ধরে নিয়ে মারধর করা হতো এবং এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হতো।
সুনামগঞ্জের ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) নজরদারী বাড়িয়েছে। ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাকসুদুল আলম জানিয়েছেন, সীমান্তের সকল ফাঁড়ির ইনচার্জকে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। নজরদারী বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ছবি ফাঁড়িগুলোতে দেওয়া হয়েছে। কাউকে সন্দেহ হলেই আটক এবং পুলিশে সোপর্দ করা হবে।
তিনি জানালেন, সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অভিযুক্তদের পালানোর কোন সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বিকালে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার এক দম্পতি। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ৫-৬ জন যুবক জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায় দম্পতিকে। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে ১৯ বছরের গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে তারা।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গৃহবধূকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে শাহপরাণ থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ছয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে শনিবার সকালে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেছিলেন ভুক্তভোগীর স্বামী।