প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট আবিষ্কারের পর দেশ-বিদেশে আলোচনায় উঠে আসে গণস্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ড. বিজন কুমার শীলের নাম। জন্মভূমি বাংলাদেশ হলেও থাকেন সিঙ্গাপুরে। সেই হিসেবে তার কাছে রয়েছে সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট। সরকারের অনুমোদন নিয়েই আসেন বাংলাদেশে। করোনা সংক্রমণের একেবোরে শুরুর দিকে সবার আগে ‘ জি র্যাপিড ডট ব্লট’ কিট তৈরি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। তবে এই কিট বাজারে আসেনি। নবায়ন হয়নি ড. বিজনের ওয়ার্ক পারমিট। তাই অরেকটা বাধ্য হয়েই বাংলাদেশ ছাড়তে হলো তাকে। তবে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন হলে আবার জন্মভূমিতে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন এই বিজ্ঞানী।
ড. বিজন কুমার শিলের আদি বাড়ি ও জন্ম বাংলাদেশে। বাংলাদেশে নাগরিকত্ব সমর্পণ করে ২০০২ সালে সিঙ্গাপুরের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। সিংগাপুরে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান নেই। ফলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হয়। তিন বছরের ওয়ার্কিং পারমিট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন বিজন। গত ১ জুলাই ওই মেয়াদ শেষ হওয়ায় মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করেন তিনি। তবে বাংলাদেশ সরকার তার আবেদনে সাড়া দেয়নি। পরে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করেন তিনি। এর মধ্যে ওয়ার্কিং পারমিট না থাকায় গণবিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষও তার সাথে চুক্তি বাতিল করেছে।
কাজের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বুকে কষ্ট চেপেই দেশ ছাড়তে হলো ড. বিজন কুমার শীলকে। দেশ ছাড়ার আগে নিজের কষ্টটা চেপে রাখেন নি তিনি। বলেন, ‘যে দেশে আমি জন্মেছি। সেই দেশের ওয়ার্ক পারমিট পাব না, এটা কল্পনাও করতে চাই না। আমি এখানে অর্থের জন্য অর্থের জন্যে চাকরি করতে আসিনি। এর চেয়ে পাঁচ-সাত গুণ বেশি সুবিধায় সিঙ্গাপুরসহ অন্য কোনো দেশে কাজ করা মোটেই কঠিন কিছু নয়। কিন্তু, আমি জন্মভূমিতেই কাজ করতে চাই। আমার তো আর অর্থ-সম্পদের দরকার নেই।’
করোনা সন্তাক্তের কিট বাজারে না আসায় বেশ মর্মাহত এই অনুজীব বিজ্ঞানী। নিজেদের তৈরি কিটের সুবিধা অন্য কোনো দেশ ভোগ করুক সেটা চান না তিনি। ‘সবার আগে কিট উদ্ভাবন করেও বাজারে আনতে পারিনি আমরা, এই দুঃখটা সারাজীবন থাকবে আমার। এই কিট অন্য কোনো দেশে উৎপাদন হোক তা আমরা কখনো চাইনি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্যার চান সবচেয়ে কম মূল্যে এই কিটের সুবিধা বাংলাদেশের জনগণ পাক।
ড. বিজন কুমার জানালেন, ওয়ার্ক ভিসার অনুমুতি পেলে আবার দেশে ফিরে কাজ শুরু করতে চান তিনি। ‘বাংলাদেশে অসংখ্য বিদেশি চাকরি করেন। তাদের যদি সমস্যা না হয়, তাহলে আমার সমস্যা হবে কেন?’ যদি ওয়ার্ক পারমিট পাই তাহলে সেই কাগজপত্র সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দিতে হবে। তারা এমপ্লয়মেন্ট ভিসা দেবে। তখন ফিরে আসব প্রিয় জন্মভূমিতে। অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কিট যে পর্যায়ে রেখে গেলাম, অনুমোদন পেলে উৎপাদনে যেতে পারবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে, কিছু কারণে আমার উপস্থিত থাকার প্রয়োজন হতে পারে। যদি উপস্থিত থাকতে নাও পারি, সিঙ্গাপুর থেকেই সহায়তা করার চেষ্টা করব’