বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ভারত ইলিশ দিয়ে আসছে। ভারতের পেঁয়াজের বড় বাজারও বাংলাদেশ। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সরকার আরো একবার পেঁয়াজবঞ্চিত করলো বাংলাদেশকে। আর এবারও পেঁয়াজ বন্ধ করার ঘোষণা তখনই আসলো যখন বাংলাদেশ থেকে ইলিশ পাঠানো শুরু হলো।
দুর্গা পূজা উপলক্ষে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ইলিশের প্রথম চালান ভারতে পৌঁছায় সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর)। আর এদিনই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। কিন্তু পেঁয়াজ না দেয়ার কথা আগে থেকেই কিছুই জানায়নি দেশটি। আর তাই হঠাৎ আমদানি বন্ধের খবরে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে কেজি প্রতি ১০ টাকা করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গত বছর এই সেপ্টেম্বরেই পেঁয়াজের মূলবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছিলো বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষের। ওই সংকটের মধ্যেই ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিলো ভারত। এরপর দিনই (৩০ সেপ্টেম্বর) ইলিশের প্রথম চালান পাঠায় বাংলাদেশ। সেবারও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার কথা আগে থেকে কিছুই জানায়নি ভারত। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে গিয়েছিলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে আকাশ পথেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিলো।
পরপর দুই বছর ইলিশ পাওয়ার পরপরই আগে থেকে না জানিয়ে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
বাংলাদেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয় তার সিংহভাগই আসে ভারত থেকে। দুই সপ্তাহ আগে থেকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেতে থেকে। একই সঙ্গে বাংলাদেশেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ জাত ও আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে ছিল।
আমদানিকারকরা বলছেন, প্রতি বছর ভারত থেকে গড়ে ১০-১৫ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের বাজারের চাহিদার সবচেয়ে বড় যোগান। কিন্তু কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ভারতের এমন রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে গেল বছর দেশের পেঁয়াজ বাজারে তৈরি চরম অস্থিরতা। যার ফলে সেবছর ৩০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে পেঁয়াজের দাম।
২০১৯ সালেও পূজা উপলক্ষে ভারতকে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ দেয় বাংলাদেশ। এ বছর তা বাড়ানো হয়েছে। এবার ১ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন করা হয় ইলিশ যাবে দেশটিতে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টার প্রাইজের প্রতিনিধি জনি ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, পূজার সময় আমরা ভারতকে ইলিশ দিচ্ছি, অথচ তারা হঠাৎ করে এভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ না করে সময় দিতে পারতো। এখন এমন অবস্থা আটকে পড়া পেঁয়াজে মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, পেঁয়াজ আমদানি সহজ করতে সোমবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল বেনাপোল বন্দরে বৈঠক করে। কিন্তু বিকেলের পর হঠাৎ করে ভারত থেকে আর পেঁয়াজ ঢুকছে না।
তিনি জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আগে তাদের কোনো চিঠিও দেয়নি।