যুদ্ধ চায় না দুপক্ষই। অন্তত মুখে মুখে এমনটাই বলছে ভারত এবং চীন। হয়তো আসলেই যুদ্ধ চাইছে না কেউই। কিন্তু উপায়ও বের করতে পারছে না। আর তাই ছোটখাটো যুদ্ধের পথে চীন-ভারত এগিয়ে যাচ্ছে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
দুই দেশের সীমান্তে গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কয়েক দফা আলোচনায়ও তেম ফল মেলেনি। আর তাই দুই দেশ সর্বশক্তি নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে বরং ছোটখাটো সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ এর প্রতিবেদনে।
বৃহস্পতিবারও রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছে। তাতেও কোনো সমাধান বের হয়নি। সাফল্য এটুকুই যে, দুই দেশই আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এটা অবশ্য নতুন পদক্ষেপ নায়। গত কয়েক মাস ধরে একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবারের আলোচনার পরেও সীমান্তে বাস্তব পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং লাদাখে আরো বেশি সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে চীন।
ভারতীয় মিডিয়াগুলো দাবি করছে, প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে ফিঙ্গার থ্রি এলাকা দখলের জন্য সেনা জড়ো করছে চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি। গত কয়েকদিনে ফিঙ্গার এলাকায় কৌশলগত ভাবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়চূড়া এবং উঁচু অংশের দখল নিয়েছে ভারতীয় সেনারা। এবার চীনা সেনারাও একই চেষ্টায় আছে।
আরো পড়ুন:
জোট বাধছে চীন রাশিয়া ইরান ও পাকিস্তান, চালাবে যৌথ সামরিক মহড়া
চীনকে সরিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে ভারতের যা দরকার
চীনের হাত ধরে পুরনো বন্ধু ভারতকে দূরে ঠেলল ইরান
ফলে যতই দু’ দেশের মধ্যে কূটনৈতিক বৈঠক চলুক, বাস্তবে ফাঁকা পাহাড় চূড়া এবং কৌশলগতভাবে সুবিধেজনক উঁচু এলাকাগুলির দখল নিতে মরিয়া দুই পক্ষই।
এছাড়া এই মুহূর্তে পিছু হঠা বেশ কঠিন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য। নমনীয়তা দেখানো তার জন্য রীতিমতো অস্বস্তিকর। কারণ আগামী মাসেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ প্লেনাম শুরু হওয়ার কথা। সেখানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপনের ঘোষণা করার কথা জিনপিংয়ের।
মাও সে তুং-এর পর নিজেকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সেরা নেতা হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া শি। একই সঙ্গে দলের শতবর্ষে দেশবাসীর সামনে নিজেকে এবং চীনকে প্রবল ক্ষমতাকে প্রমাণও করতে হবে তার। আর তাই ভারতের দাবি মেনে সেনা পিছিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া তার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরো পড়ুন:
সামরিক শক্তিতে সব থেকে এগিয়ে যে দেশ
সামরিক শক্তিতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুসলিম দেশ
এদিকে ভারতের নতুন বন্ধু আমেরিকাও বিষয়টি নিয়ে আপাতত তেমন নাক গলাচ্ছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প আপাতত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েই ভাবছে। যদিও প্রকাশ্যে এই উত্তেজনার জন্য চিনকে দায়ী করে ভারতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নির্বাচনের বিষয়টি না থাকলে তিনি হয়তো দুদেশের উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারতেন।
এসব বিষয় বিবেচনায় আপাতত উত্তেজনা নিরসন নয়, বরং ছোটখাটো সংঘাতের দিকেই দুই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।