রাজধানীর রামপুরায় স্বামী ও ছোট্ট তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকেন ২৯ বছর বয়সী হালিমা বেগম। কাজের সন্ধানে মাস কয়েক আগেই গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন তিনি সপরিবারে। কাজ না পেয়ে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। হাতিঝিলে আসা পর্যটকদের দেওয়া সাহায্যে এখন কোন রকমে ঘুরছে তার সংসারের চাকা।
অভাবের সংসারে তিন বেলা পেট ভরে খেতে না পারলেও ভালোই ছিলেন তারা। কিন্তু বিল্লাল হোসেন (২৬) নামে যৌন বিকারগ্রস্ত এক নরপশুর লালসার আগুনে ছারখার হয়ে গেছে তাদের সব আনন্দ।
বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে হাতিরঝিল থেকে ভিক্ষারত হালিমার ৩ সন্তানকে অপহরণের পর গাড়িতেই তার ৪ বছরের মেয়ে আর আড়াই বছরের ছেলের সামনে ৯ বছরের মেয়েকে একাধিকবার যৌন নির্যাতন করে বিল্লাল।
এরপর অসহায় ৩ শিশুকে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া নিউ কলোনি এনএইচ বিল্ডিং-৬ (করবী)-এর পেছনের রাস্তায় নামিয়ে দেয় সে। বিল্লাল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার গাড়ি চালক।
মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে। সেদিন দুপুরে হাতিরঝিলের রামপুরা স্পিডবোর্ড টার্মিনালের সামনে থেকে ওই শিশুদের উঠিয়ে নেয় ওই পাষণ্ড।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার গাড়িচালক। একদিন সেই কর্মকর্তাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে রাজধানীর হাতিরঝিলে থামে সে। সেখানে সাহায্য প্রার্থনারত দরিদ্র তিনটি শিশুকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর ৪ বছর বয়সী মেয়ে ও আড়াই বছর বয়সী ছেলেটির সামনেই ওদের ৯ বছর বয়সী বড় বোনকে একাধিকবার ধর্ষণ করে অসহায় তাদেরকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে সরে পড়েন।
পাশবিক নির্যাতনের শিকার ৯ বছরের শিশুটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন। অন্যদিকে পুলিশ ধর্ষক বিল্লালকে ঘটনার পর সেদিন রাতেই গ্রেফতার করে। পরদিন শুক্রবার তাকে আদালতে তোলা হয়। সেখানে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে বিল্লালের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে ওই তিন শিশুর মা।
জানা গেছে, ধর্ষক বিল্লাল হোসেনের বাবার নাম মো. আবদুর রব। তার গ্রামের বাড়ি সাভারের হেমায়েতপুর দক্ষিণপাড়ায়। বিল্লাল ৬ মাস আগে বিয়ে করেছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে তার সিলভার রঙের গাড়িটি নিয়ে হাতিরঝিলের রামপুরা সংলগ্ন স্পিডবোট টার্মিনালের কাছে আসে সে। সাহায্যের জন্য হাত পাতে বিল্লালের দিকে। সুযোগ বুঝে বিল্লাল তখন তাদের গাড়িতে ঘোরানোর এবং বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখায়। কিছু না বুঝেই শিশু তিনটি তার গাড়িতে ওঠে। কিছুদূর গিয়ে গাড়িটি থামায় বিল্লাল।
চিৎকার করলে শিশু তিনটিকে গলা টিপে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ছোট্ট দুই ভাইবোনের সামনেই তাদের বড় বোনকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তারা কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করলে গাড়ি টান দিয়ে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া নিউ কলোনি এনএইচ বিল্ডিং-৬ (করবী)-এর পেছনে নিয়ে যায় বিল্লাল। সেখানে গাড়িটি থামিয়ে ফের ৯ বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করে।
একপর্যায়ে শিশুরা চিৎকার শুরু করলে অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, ওই এলাকার স্থানীয়দের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিশুদের মা খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই মোহম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
তিনি বলেন, এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়ির নম্বর শনাক্ত করে জানতে পারি প্রাইভেটকারটি একটি গ্রুপের এক কর্মকর্তার নামে নিবন্ধন করা। আর এর চালক হিসেবে কর্মরত বিল্লাল হোসেন। তথ্য-প্রমাণ নিশ্চিত হয়ে রাতেই বিল্লালকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। যৌন বিকারগ্রস্ত বিল্লাল এর আগেও এমন অনেক অপরাধ করেছে বলে ধারণা পুলিশের। আদালতের নির্দেশে বিল্লালকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।