৮৬ বছর পর ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত হায়া সোফিয়াতে আজানের ধ্বনি শোনা গেল। তুরস্কের আদালতের রায়ের পর এটিকে মসজিদে রূপান্তর করে এরদোয়ান সরকার। শুধু তাই নয়, সাবেক এই গির্জাকে জাদুঘরে পরিণত করা ঠিক ছিল না বলেও রায় দিয়েছে তুরস্কের আদালত।
এর পরেই তুরস্কের ইসলামপন্থী সরকারের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান এটিকে মসজিদ বানানোর আদেশে সই করেন।
দেড় হাজার বছরের পুরনো হাইয়া সোফিয়া এক সময় ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গির্জা। এরপর এটি পরিণত হয় মসজিদে, পরে জাদুঘর এবং সবশেষ আবারো মসজিদে রূপান্তরিত হল এটি।
তুর্কি আদালতের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ। তবে এরদোয়ান বলছেন, আদালতের রায়ের পর নামাজ পড়ার জন্য হাইয়া সোফিয়াকে খুলে দেয়া হবে। এক টুইটে তিনি বলেন, হাইয়া সোফিয়ার সম্পত্তি ‘দিয়ামাত’ বা তুর্কী ধর্মীয় বিষয়ক দফতরের হাতে সোপর্দ করা হবে।
এর পরপরই হাইয়া সোফিয়াতে আজান দেয়া হয়; যা দেশটির টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
হাইয়া সোফিয়ার ইতিহাস:
৫৩৭ সালে বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান ইস্তাম্বুলের গোল্ডেন হর্ন নামে এক জায়গায় একটি বিশাল গির্জা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকেই হাইয়া সোফিয়ার ইতিহাসের সূচনা। তখন বিশাল গম্বুজের এই গির্জাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা এবং দালান বলে বিবেচনা করা হতো।

হায়া সোফিয়া
১২০৪ সালে ক্রসেডারদের হামলার ঘটনা বাদে কয়েক শতাব্দী ধরে হাইয়া সোফিয়া বাইজান্টাইনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
অটোমান (ওসমানীয়) সুলতান তৃতীয় মেহ্মেদ ১৪৫৩ সালে বাইজান্টাইন শাসকদের কাছ থেকে ইস্তাম্বুল দখল করে নেন। এর আগ পর্যন্ত শহরটির নাম ছিলো কনস্টান্টিনোপল। ইস্তাম্বুল দখলে নেয়ার পর মুসলিম বাহিনী হাইয়া সোফিয়াতে প্রথমবারের মতো নামাজ আদায় করে। এরপর থেকে অটোমান শাসকরা এটিকে মসজিদে রূপান্তর করেন এবং মসজিদের চারপাশে চারটি মিনার তৈরি করেন। এছাড়া গির্জার খ্রিস্টান প্রতিকৃতিগুলো কুরআনের বানী দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।
পরবর্তী কয়েকশ বছর অটোমান মুসলিম সম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো হাইয়া সোফিয়া। অটোমান সম্রাজ্যের পতনের পর ১৯৩৪ সালে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করার প্রক্রিয়ায় মসজিদটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন কামাল আতাতুর্ক। ৮৬ বছর পর ২০২০ সালে এসে মুসলিম জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটির সবচেয়ে দর্শনীয় এ স্থাপনাকে আবারো মসজিদে রূপান্তর করলেন। প্রতিবছর এই হাইয়া সোফিয়া দেখতে ৩৭ লাখ পর্যটক সেখানে যান।